সিনেমার সংলাপে ম্যানেজমেন্ট এর পাঠ। এ নতুন কিছু না, অহরহ ঘটছে সিনেমার পর্দায় তা দর্শক সাধারণের কাছে সময় বিশেষে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর অন্যতম উদাহরণ – সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন অভিনীত “অগ্নিপথ” ছবি। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র রাজা ভেঙ্কটেশ্বর, সুপারস্টার অমিতাভের ফ্যান। এই ছবিটি বক্স অফিসে হিট হওয়ার আগেই ১০ দিনের মধ্যে আটটি – ‘শো’ দেখেছেন তিনি। এবং অমিতাভের ২১টি ছবি থেকে ২১টি ডায়লগ বেছে নিয়ে তাঁর প্রথম লেখা বইয়ে যুক্তিগ্রাহ্য বর্ণনা করেছেন তিনি ।
সুলেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন নয়, এই পুস্তক প্রকাশ তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা এবং সিটি অফ জয় – এই কলকাতা শহরেই । জন্ম ও শৈশবের দিনগুলো কেটেছে কলকাতায়। সেন্ট লরেন্স স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। যদিও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আপাদমস্তক প্রযুক্তিবিদ এবং স্বপ্নদর্শী। তাঁরই এক ফাঁকে কলম ধরেছেন – “স্মৃতি, চলচ্চিত্র এবং পরিচালনা”। যা তার মনের গভীর প্রতিফলন । বইটি আগাগোড়া – মননশীল। নিপুণ শৈলীতেই রচিত হয়েছে এই পুস্তকের প্রেক্ষাপট ।
উপরন্তু, শিক্ষা হিসাবে নেওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্র থেকে বক্তৃতা, একটি সুন্দর রূপক হিসাবে কাজ করে। আদতে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রেই। গত দু’ দশক ধরে দূরদর্শিতার সঙ্গে নেতৃত্বদানে পথ পরিক্রমার পাশাপাশি মানবিকতা রক্ষায়ও অভিজ্ঞ । লেখক, চারটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় (আই আই টি, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো, আই ই বিজনেস স্কুল এবং ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি) – তে অধ্যয়নের পর হেঁটেছেন। তাঁকে আমাজন জঙ্গলের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে । বেশ কিছু সুউচ্চ পর্বতমালা পেরিয়েছেন । সুদীর্ঘ ঐ যাত্রাপথে সাপের কামড় ও জংলি মাছের অত্যাচার তাঁকে সহ্য করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বর্তমানে থাকেন তিনি এবং প্রায়ই তাঁর নিজের বাড়িতে পোষ্য মুরগির সঙ্গে তাঁর ভাব বিনিময় হয়ে থাকে । এই বইটিতে সারল্যের উদাহরণ ও মূল সুর ধরা পড়ে যা সরাসরি হৃদয় থেকেই আসে। এতটাই স্পষ্ট যে তিনি চলচ্চিত্র, মানুষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে গুরুতর চিন্তাভাবনাকে প্রকৃত ভালবাসেন। সুতরাং পুস্তকটি তাঁর কাছে এক অনন্য দলিল মাত্র।
এদিকে, প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক কৌশল বোঝার ক্ষেত্রে কম সংখ্যক মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মিল রাখতে পারে। এটি তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং গল্পগুলির সাহায্যে বইটি জুড়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, যা বন্ধুত্বপূর্ণ সুরে প্রিয় বলিউড অভিনেতার পরিচয়ের সাথে জড়িত ! বিশেষত কিছু ব্যক্তিগত উপাখ্যান রয়েছে, হালকা চালে ও বিনয়ী সুরের মাধ্যমে এই পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত, অতি সহজেই যা অনুমেয় ।
আহভা কমিউনিকেশন আয়োজিত দক্ষিণ কলকাতার ক্যাফে’তে আলোকিত এক প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে পুস্তকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বিপ্লব দাশগুপ্ত সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিচালনা করেন। লেখক রাজা ভেঙ্কটেশ্বর ছাড়াও সাংবাদিক মঞ্জিরা মজুমদার ও লেখক বৈশালী চ্যাটার্জি দত্ত – প্যানেলিস্ট হিসাবে যোগ দেন। তাঁর এই পুস্তক রচনা সবে শুরু। পাঠক ও দর্শক এবং পুস্তক প্রেমীদের চাহিদা ও পছন্দের ভিত্তিতেই আগামী বছরের মাঝামাঝি আরও দুটি বিষয় নিয়ে পুস্তক প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞে বাঁচার মূল মন্ত্র আনন্দ এবং তা খুঁজে পেতে হলে আড্ডা, হাসি, বন্ধুত্ব – নতুন করে বেঁচে থাকার আসল রসদ ।