মৌসুমী রায়: একটি পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তিনটি নারী চরিত্র। একজন পুরুষটির মা যিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ যুক্তিবাদী এক ব্যক্তিত্বসম্পন্না মহিলা অপরদিকে তার প্রাক্তন আর বর্তমান স্ত্রী। তিন নারীর এক অদ্ভুত টানাপোড়েনের গল্প “অর্ধাঙ্গিনী” । একটি আপাত সুখী যৌথ পরিবারের অন্তর্নিহিত যন্ত্রণাগুলো ঘরের মোটা দেওয়াল ভেদ করে যেন ছুঁতে পারে না অন্যদের। সন্তান না হওয়ার সর্বস্ব দায় তাই অনায়াসে চাপিয়ে দেওয়া যায় স্ত্রীটির ওপর যখন সেখানে কারণ পুরুষটি স্বয়ং। নারীকে সামনে রেখে পুরুষটির মিথ্যেপৌরুষ, প্রচলিত সংস্কারে সব দায় ঝেড়ে ফেলার প্রতিবাদ থেকেই গল্পে সমস্যার সূত্রপাত। শাশুড়িমা আর বৌমার কথোপকথনে উঠে আসা পক্ষপাতহীন ভাবনা অত্যন্ত সদর্থক যা পারস্পরিক সম্মানের রূপান্তর। ভাবনার অভিব্যক্তি এখানে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দুই পোড় খাওয়া অভিনেত্রী চূর্ণি গাঙ্গুলি ও লিলি চক্রবর্তী। প্রাক্তন স্ত্রীর ভূমিকায় চূর্ণি গাঙ্গুলির অভিনয় অনবদ্য।
বর্তমান আর প্রাক্তন স্ত্রীর টানাপোড়েনের মাঝে উভয়পক্ষের আত্মসম্মানকে প্রাধান্য দিয়েছেন পরিচালক। বাস্তবোচিত কিছু অনভিপ্রেত পরিস্থিতিতে দুপক্ষের মুখোমুখিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নীচু না করেও প্রথম স্ত্রীর গুরুত্ব বুঝিয়েছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। সেখানে আবেগ আত্মসম্মানকে ছাপিয়ে যায়নি কখনোই। পেশায় শিক্ষিকা প্রাক্তনা স্ত্রী তার নিজস্ব বৃত্তে নিজেকে প্রমাণ করতে পারাটা এমন এক আত্মতৃপ্তি তৈরি করে যা তার একলা যাপনের পথটাকে অনেকটাই সহজ আর মসৃণ করে তোলে। এক্ষেত্রে কোনো শো-অফ না করে আড়াল থেকে মানবিক দিকটিকে এগিয়ে রাখেন পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি যা গল্পে প্রাক্তন স্ত্রীকে একটা ভালো মনের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। ব্যক্তিত্বময়ী, সেনসিটিভ, অরগানাইজ্ড এক নারী চরিত্র। কিছুটা বাধ্যবাধকতা আর কিছুটা স্বার্থপরতার মিশেলে তৈরি চরিত্রের প্রতিটা বাঁকে বর্তমান স্ত্রী বাংলাদেশী গায়িকার চরিত্রে জয়া এহসানের অভিনয়ও অত্যন্ত সাবলীল। কেন্দ্রীয় চরিত্রে কৌশিক সেন খুব অল্প পরিসরে নানা চারিত্রিক ভাঁজ ফুটিয়ে তুলেছেন যথাযথ যোগ্যতায়। আর গল্পে তিন বলিষ্ঠ নারী চরিত্রের মাঝে সূত্রধরের ভূমিকায় অম্বরীশের অভিনয়ের অনায়াস যাতায়াত ও চরিত্রটির গ্রহণযোগ্যতা বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে। খুব সংক্ষিপ্ত একটি বাস্তব বিষয়ের ওপর তৈরি দুই অর্ধাঙ্গিনীর এই টানটান গল্প বেশ উপভোগ্য ও সমাজের কাছে একটা বার্তা যার রেশ থেকে যায় সিনেমা শেষের পরেও।