দেবজ্যোতি রায়চৌধুরী: এটা কিন্তু একটা ব্রিটিশ আমলের কামান। কলকাতা কে সিরাজ এর হাত থেকে রক্ষার করতে ব্রিটিশরা এই কামান ব্যাবহার করছেন। এখন এটা কলকাতার রাস্তা তে পোতা আছেন। দেখেছেন অনেকে কিন্তু জানেন না কলকাতা আক্রান্ত। সেই প্রথম আর সেই শেষ। পুরনো কেল্লা রক্ষার সঙ্গে সিরাজের বাহিনীকে বাধা দিতে ইংরেজরা তিন জায়গায় কামান সাজিয়েছিল, যাকে সামরিক পরিভাষায় বলে ‘ব্যাটারি অব গানস’। এখনকার হাওড়া ব্রিজের কাছে ‘নর্থ ব্যাটারি’, লালবাজারের কাছে ‘ইস্ট ব্যাটারি’ আর রাজভবনের জায়গায় ‘সাউথ ব্যাটারি’। যুদ্ধবিগ্রহ কবে মিটে গিয়েছে— নবাব কি ব্রিটিশ কেউ আর নেই, কিন্তু সেই যুগের স্মৃতি নিয়ে কলকাতার বুকে রয়ে গিয়েছে কিছু কামান। ফেয়ারলি প্লেস আর স্ট্র্যান্ড রোডের মোড়ে ফুটপাতে চায়ের দোকানের পাশে মাটিতে আধখানা পোঁতা অবস্থায় আকাশের দিকে মুখ তুলে আছে এক কামান। ঠিক এখানেই ছিল পুরনো কেল্লার উত্তর-পশ্চিম বুরুজ। এটি সেই দুর্গের কামান। ইংল্যান্ডে ১৭৩২ সাল থেকে এই ধরনের কামান তৈরি শুরু হয়। ১৮ পাউন্ড ওজনের গোলা ছোড়া যেত এটি থেকে।
Amitabha Karkun এর লেখা অনুযায়ী , ফেয়ারলি প্লেস এবং স্ট্রান্ড রোডের সংযোগ স্থলে আংশিক মাটিতে প্রোথিত ঊর্ধমুখী কামানটির দৃশ্যমান অংশটুকু মাপজোক করে দেখেছি । বোরটি কিছু দুষ্কৃতকারী ছেনি হাতুড়ি দিয়ে কেটে ধাতু সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল সেই জন্য muzzle-এর মুখে ছেনির দাগ পড়েছে, দেখলে মনে হয় নলের মধ্যে প্যাঁচালো খাঁজ কাটা আছে (Rifeling)। বোরের মধ্যের মাটি সরিয়ে একটু গভীরে গিয়ে দেখেছি এটি smooth bore এবং সেটাই হওয়ার কথা । রয়্যাল মিলিটারি একাডেমীর অধ্যাপক Issac Landmark-এর 1788 খ্রিষ্টাব্দে লেখা বিখ্যাত বই ‘Notes On Artillery” –তে দেওয়া মাপ অনুযায়ী এই কামানটি ইংল্যান্ডে তৈরি এবং ২৪ পাউণ্ড ওজনের গোলা ছোঁড়ার উপযোগী আর্মস্ট্রং ডিজাইনের কামান, যে ডিজাইন ১৭৬০ খৃষ্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনীতে গৃহীত হয়েছিল । কামানটি মাটি খুঁড়ে বার করে পরিষ্কার করলে আরও নিশ্চিত ভাবে আরও কিছু তথ্য জানা সম্ভব হবে।C.R.Wilson-এর লেখা বই থেকে থেকে জানা যায় পুরোন ফোর্ট উইলিয়ামের উত্তর-পশ্চিম কোনাটি আলোচ্য কামানের অবস্থান থেকে অনেকটা পূর্বদিকে ছিল।কামানটি এখন যেখানে আছে ১৭৫৬ সালে সেখানে তখন নদী বয়ে যাচ্ছে ।পুরোন ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে বসান কামানগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে মনে হয় এটি সেই দূর্গের কামান নয় । বাতিল হয়ে যাওয়া পুরাতন কামান ঊর্ধমুখী করে মাটিতে পুঁতে জমির সীমা নির্ধারণ করা এক সময় বেশ প্রচলিত ছিল । নৌকা বাঁধার জন্য ওই ধরনের ঊর্ধমুখী কামান ব্যবহৃত হোত কি না সে বিষয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি । প্রশ্ন কিন্তু উঠছে !
Source : Social Media